আঞ্চলিক ভাষায় পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ১৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রশংসা করেছেন উপ-রাষ্ট্রপতি

আঞ্চলিক ভাষায় পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ১৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রশংসা করেছেন উপ-রাষ্ট্রপতি

2 min read

নয়াদিল্লি, ২১ জুলাই (TNA) আঞ্চলিক ভাষায় পঠন-পাঠনের সুযোগ করে দিতে ৮টি রাজ্যে ১৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রয়াসের প্রশংসা করেছেন উপ-রাষ্ট্রপতি শ্রী এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু। তিনি আরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিকে পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

আঞ্চলিক ভাষায় পঠন-পাঠনের সুযোগ ছাত্রছাত্রীদের কাছে আশীর্বাদ-স্বরূপ বলে উল্লেখ করে উপ-রাষ্ট্রপতি তাঁর গভীর ইচ্ছার কথা প্রকাশ করে বলেন, “এটা আমার আন্তরিক ইচ্ছা যে, সেই দিন আমি অবশ্যই দেখতে পাবো, যখন ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা ও আইনের মতো সমস্ত বৃত্তিমূলক ও পেশাদার কোর্সগুলি মাতৃ ভাষাতেই পড়ানো হবে”।

‘মাতৃ ভাষায় ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স – সঠিক দিশায় পদক্ষেপ’ শীর্ষক ১১টি ভারতীয় ভাষায় প্রকাশিত এক ফেসবুক পোস্টে উপ-রাষ্ট্রপতি ১১টি আঞ্চলিক ভাষায় বি-টেক কোর্সের লেখাপড়ায় অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিকাল এডুকেশন (এআইসিটিই) যে সুযোগ করে দিয়েছে, তাতে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। ছাত্রছাত্রীরা যে ১১টি আঞ্চলিক ভাষায় বি-টেক কোর্সে পড়াশুনা করতে পারবেন, সেই ভাষাগুলি হ’ল – বাংলা সহ হিন্দি, মারাঠি, তামিল, তেলেগু, কন্নড়, গুজরাটি, মালায়ালি, অসমিয়া, পাঞ্জাবী ও ওড়িয়া। নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে নির্দিষ্ট কয়েকটি শাখায় ১৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ আঞ্চলিক ভাষায় পঠন-পাঠনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে তিনি স্বাগত জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এটি সঠিক লক্ষ্যেই এক পদক্ষেপ”।

যে সমস্ত ভাষা বিলুপ্ত হয়েছে বা অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্তির পর্যায়ে পৌঁছতে চলেছে, সেই সমস্ত ভাষাগুলির সংরক্ষণ ও প্রচারে শিক্ষা মন্ত্রক যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় বলে উপ-রাষ্ট্রপতি অভিমত প্রকাশ করেন।

মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, এর ফলে একজন পড়ুয়ার লেখাপড়ার প্রতি আকাঙ্খা ও উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, অন্য ভাষায় একটি বিষয়কে বুঝতে গেলে প্রথমেই তাকে সেই ভাষায় পারদর্শী হতে হবে এবং এজন্য কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন। অবশ্য, নিজের মাতৃভাষায় কোনও বিষয়কে উপলব্ধি করা খুব জটিল নয়।

আমাদের দেশের ভাষাগত সমৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারতে কয়েকশো ভাষা ও হাজার হাজার উপ-ভাষা রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম একটি ভিত্তিই হ’ল ভাষাগত বিবিধতা। মাতৃভাষার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে শ্রী নাইডু বলেন, মাতৃভাষা আমাদের কাছে সর্বাদাই বিশেষ গুরুত্ব পায়। কারণ, মাতৃভাষার প্রতি আমাদের অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

রাষ্ট্রসংঘের একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে শ্রী নাইডু বলেন, প্রতি দু’সপ্তাহে বিশ্ব থেকে একটি করে ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ১৯৬টি ভারতীয় ভাষাও সংকটগ্রস্ত বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমাদের মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও তার প্রসারে বহুমুখী কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। শ্রী নাইডু সাধারণ মানুষকে মাতৃভাষা ছাড়াও অন্যান্য ভাষা শেখার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বর্তমান আন্তঃসংযুক্ত এই বিশ্বে বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শিতা অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষ সুবিধা করে দিতে পারে। যখন আমরা কোনও ভাষা শিখি, তখন সেই ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কও নিবিড় হয়।

ভাষা সংরক্ষণ ও প্রসারে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করে উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, নতুন শিক্ষা নীতিতেও অন্তত পক্ষে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত এবং সম্ভব হলে অষ্টম শ্রেণী বা তার পরেও মাতৃভাষায়/স্থানীয় ভাষায়/আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষাদানে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, সারা বিশ্বে বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে এটা জানা গেছে যে, লেখাপড়ার শুরুতে মাতৃভাষায় শিক্ষাদান একটি শিশুর আত্মবিশ্বাস ও তার সৃজনশীলতাকে উদ্বুদ্ধ করে।

শ্রী নাইডু বলেন, সরকারের একার পক্ষে প্রত্যাশিত পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। এই কাজে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষায় সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। মাতৃভাষায় কথা বলা বা যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উপ-রাষ্ট্রপতি সাধারণ মানুষকে কেবল বাড়িতেই নয়, বরং সম্ভব হলে অন্যত্রও মাতৃভাষায় কথা বলার নিদান দেন। শ্রী নাইডু বলেন, ‘একটি ভাষার অস্তিত্ব তখনই টিকে থাকবে, যখন তার ব্যাপক ব্যবহার ও প্রয়োগ হবে’।

logo
The News Agency
www.thenewsagency.in