বর্ষব্যাপী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ২৩শে জানুয়ারী থেকে শুরু হবে
নতুন দিল্লি, ১৯ই জানুয়ারী, ২০২১ || বর্ষব্যাপী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ২৩শে জানুয়ারী থেকে শুরু হবে। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী শ্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল আজ নতুন দিল্লিতে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে এই ঘোষণা করে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী, কলকাতায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করবেন। সরকার, প্রতি বছর ২৩শে জানুয়ারীকে “পরাক্রম দিবস” হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, এসংক্রান্ত গেজেড বিজ্ঞপ্তি আজ প্রকাশিত হয়েছে।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে যথাযথভাবে উদযাপিত হবে। এবিষয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরি করা হয়েছে বলে শ্রী প্যাটেল জানিয়েছেন। এই কমিটি সারা বছর ধরে যে সব অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলির তদারকি করবে। কমিটি, নেতাজী এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে সম্পৃক্ত দিল্লি, কলকাতা সহ দেশ – বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যে সব অনুষ্ঠান হবে, সেগুলির বিষয়ে কমিটি, পরামর্শ দেবে।
মন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, বর্ষ ব্যাপী উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে সংস্কৃতি মন্ত্রক, বেশ কিছু প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে। কলকাতায় ২৩শে জানুয়ারী ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে প্রধানমন্ত্রীর পৌরহিত্যে যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হবে, সেখানে নেতাজীকে নিয়ে একটি স্থায়ী প্রদর্শনী এবং প্রজেকশন ম্যাপিং শো-এর সূচনা করা হবে। নেতাজীর জীবনের উপর ভিত্তি করে “আমরা নতুন যৌবনেরই দূত” শীর্ষক একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। শ্রী প্যাটেল জানিয়েছেন, এই দিন একটি স্মারক মুদ্রা ও ডাক টিকিটও প্রকাশ করা হবে।
ঐ দিনই কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে “একবিংশ শতকে নেতাজীর উত্তরাধিকার নিয়ে ভাবনা” শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং শিল্পী শিবিরের আয়োজন করা হবে।
শ্রী প্যাটেল আরো জানিয়েছেন, সংস্কৃতি মন্ত্রক, ওডিশার কটকে নেতাজীর জন্মস্থানে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী শ্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করবেন। নেতাজীর স্মৃতিবিজড়িত গুজরাটের হরিপুরায় আরেকটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।
কেন্দ্রের অন্যান্য মন্ত্রকও এই উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেছে। উচ্চ পর্যায়ের কমিটির থেকে পরামর্শক্রমে এই অনুষ্ঠানগুলি আয়োজন করা হবে। পর্যটন মন্ত্রক, কাবাডি টুর্নামেন্ট সহ জাতীয় স্তরে দেশীয় নানা খেলাধূলো আয়োজন করবে। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে মধ্যপ্রদেশের নরসিংহপুর জেলায় নেতাজীর জন্মদিনে সহযোগ ক্রীড়া মন্ডল এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে আসছে। ক্রীড়া দপ্তর, নেতাজী ফুটবল টুর্নামেন্ট ও ম্যারাথন, যুব বিষয়ক দপ্তর পদযাত্রা ও সাইকেল যাত্রা, পর্যটন মন্ত্রক মণিপুরে নেতাজীর জীবন ও ঘটনাবলী নিয়ে “দেখ আপনা দেশ ” –এ ওয়েবিনার, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, এবছর বিটিং রিট্রিট সেরিমনিতে আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিখ্যাত সুর “কদম কদম বাড়ায়ে যা” বাজাবে।
অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রক, কয়েকটি বিমানে নেতাজীর ছবি আঁকবে। বিশেষত আন্দামান ও নিকোবরগামী বিমানগুলিতে এই ছবি আঁকা হবে। রেল মন্ত্রক, নেতাজীর নামে একটি এক্সপ্রেস ট্রেন চালানোর প্রস্তাব করেছে। শিক্ষামন্ত্রক, দেশের ৫টি বিশ্ববিদ্য়ালয়ে নেতাজীর নামাঙ্কিত ৫টি চেয়ারের প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়াও নেতাজীর উপর অনলাইনে বক্তৃতা এবং তাঁর জীবনের শিক্ষার উপর ওয়েবিনারের আয়োজন করবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন “ভারতের জন্য নেতাজীর স্বপ্ন কিভাবে বাস্তবায়িত হবে” শীর্ষক একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। আকাশবাণী ও দূরদর্শন প্যানেল আলোচনাচক্রর আয়োজন করার পাশাপাশি, নেতাজীর সময়কাল ও জীবন নিয়ে তথ্যচিত্র সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান তৈরি করবে।
জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি ২০২০র ২৫শে নভেম্বর একটি বৈঠকে দেশে নেতাজীর অসামান্য অবদানের প্রতি সম্মান জানাতে তাঁর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীটি যাতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে যথাযথভাবে আয়োজন করা যায়, সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সংস্কৃতি মন্ত্রক, ১৫ই ডিসেম্বর এই উদযাপনের বিষয়ে একটি বৈঠক করে। ঐ বৈঠকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সম্পর্কে আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রাক্তন সেনানী সহ বিশিষ্ট জনেরা উপস্থিত ছিলেন। এসংক্রান্ত একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি ৮ই জানুয়ারী প্রকাশিত হয়েছে। এই কমিটিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা, ঐতিহাসিক, লেখক, বিশেষজ্ঞ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর পরিবারের সদস্যরা এবং আজাদ হিন্দ বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বরা রয়েছেন।